পাঠক

সাহিত্য পাতা

নীরব ত্যাগ

প্রিন্ট
 নীরব ত্যাগ

ছবি : মাহমুদুল হাসান শান্ত


প্রকাশিত : ২৪ অক্টোবর ২০২৪ আপডেট : ২৫ অক্টোবর ২০২৪

গল্পের নাম: নীরব ত্যাগ









মীরার জীবন যেন দিন দিন আরও অগোছালো হয়ে যাচ্ছে। তার স্বপ্নের সংসার আজ টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে। ছোট্ট বাচ্চাটাকে সে ভালোভাবে মানুষ করতে চায়, কিন্তু বাড়ির পরিবেশে সে নিজের সন্তানকে সুন্দর জীবন দিতে পারছে না। নিজের বাচ্চার ভবিষ্যতের কথা ভেবে তার মন প্রতিনিয়ত ভেঙে যায়। সে কাঁদতে কাঁদতে বলে, "জীবনে সবচেয়ে বেশি যাকে ভালোবেসেছি, সেই মানুষটাই আজ আমাকে সবচেয়ে বেশি কষ্ট দিচ্ছে। সে আমাদের সন্তানের দায়িত্ব নেয় না, আমার সংসারও গুছিয়ে রাখে না।"

এদিকে, মীরার শশুর-শাশুড়ি তার দুর্বল অবস্থার সুযোগ নিয়ে তাকে আরও বেশি কষ্ট দিচ্ছে। তারা মীরাকে ছোটখাটো বিষয় নিয়েও কটূক্তি করতে থাকে। মীরা বুঝতে পারে, তার স্বামী যেহেতু তাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না, তাই শশুর-শাশুড়ি তাকে প্রতিদিন আরও বেশি মানসিকভাবে নির্যাতন করছে। এই অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে মীরা নিজেকে অসহায় বোধ করে, কিন্তু নিজের সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে সে সমস্ত কষ্ট সহ্য করে যাচ্ছে, যেন তার বাচ্চাটা এতিম না হয়ে যায়।





মীরার মনটা যেন ভেঙে গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে গেছে। সে সংসার নামক জীবনটাকে ঘৃণার চোখে দেখে, যেখানে ভালোবাসার বদলে শুধুই অবহেলা আর কষ্ট জায়গা করে নেয়।

মীরা তার বাচ্চাকে নিয়ে বাড়ি ছাড়ার পর প্রথমে খুব কঠিন সময়ের মুখোমুখি হয়। কিন্তু নিজের সন্তানকে সঠিকভাবে বড় করার সংকল্প তাকে শক্তি যোগায়। সে জানত, এই সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ ছিল না, কিন্তু বাচ্চাটার ভবিষ্যতের জন্য এটা অপরিহার্য ছিল। ধীরে ধীরে সে নিজের একটা নতুন জীবন গড়ে তুলতে শুরু করে, যেখানে নেই শাশুড়ির নির্যাতন, নেই স্বামীর অবহেলা।

মীরা উপলব্ধি করে, ভালোবাসা আর যত্নে গড়া সংসার শুধু একজনের প্রচেষ্টায় টিকে থাকে না। দায়িত্বের অংশীদারিত্ব না থাকলে সেই সম্পর্কের ভিত্তি খুব দ্রুত ভেঙে যায়। সে নিজের সংসারকে অনেক ভালোবাসত, কিন্তু স্বামীর অবহেলা আর শাশুড়ির অত্যাচারে সেই সংসার তার কাছে এখন একটি তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তার জীবনে যে ভালোবাসার জন্য সে একসময় এতটা ত্যাগ স্বীকার করেছিল, সেই ভালোবাসা এখন ঘৃণার রূপ নিয়েছে। মীরা ঘুরে দাঁড়ায়, নিজের সন্তানের জন্য, নিজের জন্য। সে বুঝতে পারে, একটা ভেঙে যাওয়া সম্পর্কের পেছনে কাঁদতে থাকা তার জীবনের সমাধান হতে পারে না। তাকে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।

মীরার এই যাত্রা শেষ হয় নতুন করে শুরু করার শক্তি নিয়ে। একসময় যে সংসারটাকে সে ঘৃণার চোখে দেখত, সেটা পেছনে ফেলে এখন সে নিজের সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য জীবনটাকে নতুনভাবে সাজিয়ে তুলতে প্রস্তুত।