পাঠক
চার লেন সড়কটির প্রস্থ ৯০ ফুট। এর মধ্যে ৬০ ফুট রাস্তায় দখলে। যানবাহন চলাচল ও পথচারীদের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে সড়কের মাত্র ৩০ ফুট। সড়কের দখল করা অংশে কয়েকশ ভ্যান রাস্তার ওপর দাঁড় করিয়ে কাপড়, জুতা, ফলসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করে। পাটি বিছিয়ে বসানো হয়েছে শতাধিক দোকান। এতে করে ভোগান্তিতে পড়েছে পথচারীরা। একইসঙ্গে বেড়েছে যানজটও। ঘটনাটি কেরানীগঞ্জের কদমতলী চার লেন সড়কের।
চার লেনের এ সড়কটি বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় সেতুর প্রান্ত থেকে শুরু করে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে মিলেছে। সেতু পেরিয়ে কেরানীগঞ্জে ঢুকলেই কদমতলী চার লেন সড়ক। এ সড়ক দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের অনেকগুলো জেলায় যাতায়াত করা যায়। সড়কটির শুরুর ২০০ মিটার এলাকায় দখল করা হয়েছে ৬০ ফুট জায়গা।
সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, বিএনপির নাম ভাঙিয়ে দোকান বসিয়ে সেখান থেকে তোলা হচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কদমতলী গোলচত্ত্বর থেকে সৈমন্তি টাওয়ার পর্যন্ত দুই শতাধিক ভ্রাম্যমাণ দোকান রয়েছে। এসব দোকান থেকে প্রতিদিনই ৭০ টাকা করে চাঁদা তুলেন আগানগর ইউনিয়ন যুবদলের কর্মী তারিক ইসলাম ও মর্জিনা বেগম। সম্প্রতি মর্জিনার চাঁদা আদায়ের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
সড়কটির অপরপাশ তানাকা ফিলিংস্টেশন থেকে ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক সেন্টার পর্যন্ত রয়েছে আড়াইশ দোকান। সেগুলো থেকে প্রতিদিন ৫০ টাকা করে চাঁদা আদায় করছেন আলমগীর হোসেন নামে একজন। এছাড়া একই এলাকায় অবৈধ সিএনজি ও মোটরসাইকেল স্ট্যান্ড থেকেও চাঁদা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেখান থেকে প্রতিটি যানবাহনের চালকের কাছ থেকে প্রতিদিন ৫০ টাকা করে চাঁদা আদায় করেন লোকমান হোসেন ও শহিদ মিয়া নামের দুজন।
স্থানীয়রা জানান, এসব দোকান থেকে চাঁদা তোলার কাজ করতেন স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা রাসেল মেম্বার ও তার অনুসারীরা। গত ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর নিয়ন্ত্রণ চলে যায় বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের পরিচয়ধারী কয়েক নেতাকর্মীর হাতে। এছাড়া এসব দোকানে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে দোকান প্রতি ২০ থেকে ৫০ টাকা করে আদায় করা হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, ৯০ ফুট প্রশস্ত সড়কের দুপাশে সাড়ে চার শতাধিক অবৈধ দোকান বসানো হয়েছে। দোকানিরা প্লাস্টিকের ছাউনি, বাঁশ ও কাঠের স্টল তৈরি করে সড়ক দখল করে পোশাক, জুতা, শিশুদের খেলনা, মোবাইল সামগ্রীসহ নানা পণ্যের পসরা সাজিয়েছেন। এমনকি পথচারীদের হাঁটার জন্য নির্মিত ড্রেনেজ লাইনের ওপর কংক্রিটের স্লাবের জায়গাটিও দখল করে বসানো হয়েছে দোকানপাট।
কদমতলী এলাকার ব্যবসায়ী মো. বাবলু বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা। বিগত দিনে আওয়ামী লীগের লোকজন এসব অবৈধ দোকান বসিয়ে টাকা আদায় করতো। এখন বিএনপির লোকজন টাকা উঠায়। কেউ কোনো ব্যবস্থা নেয় না। একটা চার লেন সড়কের দুই তৃতীয়াংশ বছরের পর বছর এভাবে দখল হয়ে থাকবে, এটা মানা যায় না।’
চাঁদা তোলার বিষয়ে জানতে চাইলে লোকমান হোসেন বলেন, ‘আমি কোনো চাঁদাবাজি করি না। অটোরিকশা স্ট্যান্ডে শৃঙ্খলা রক্ষার কাজ করি। আমার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া হচ্ছে।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আলমগীর বলেন, ‘সড়কের ফুটপাতে আমার নিজের ব্যবসা রয়েছে। আমি কোন চাঁদা আদায় করি না। ষড়যন্ত্র করে আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া হচ্ছে।’
জিনজিরা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোকাররম হোসেন সাজ্জাদ বলেন, ‘দলের নাম ভাঙিয়ে কেউ যদি এ ধরণের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া আমি এলাকাবাসীকে অনুরোধ করব, যারা চাঁদাবাজি করে তাদের আইনের হাতে তুলে দিতে।’
কদমতলী সড়কের অবৈধ স্থাপনার বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রাফিক বিভাগ ঢাকা জেলা দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মজিবুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি আমরা অবগত। সম্প্রতি উপজেলা আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে এটি উত্থাপিত হয়েছে। সড়কটি থেকে অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করলেও কিছুক্ষণ পর তারা পুনরায় দোকান নিয়ে বসে পড়ে। মোবাইল কোর্ট না থাকায় জেল জরিমানা করা যায় না। আবার অনেক সময় সংঘবদ্ধ হয়ে দখলদাররা আমাদের দিকে তেড়ে আসে। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’
মতামত